সন্তানের প্রতি মায়ের মমতা আর ধৈর্য্য অপরিসীম।
সন্তান যাই করুক না কেন – তাতে মুগ্ধ হবার এক অসাধারণ ক্ষমতা খোদা তাদের দিয়ে দিয়েছেন।
বাবাদের ক্ষেত্রে অবশ্য এই ভালবাসা এতটা মজবুত নয়।
বাবাদের ভালবাসা ওঠা-নামা করে।
সন্তান যখন শান্ত থাকে, বাবাদের ভালবাসার পারদ লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে। আবার সন্তান যখন কাঁদতে শুরু করে, বা বিরক্ত করে – তখন সেই পারদ ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে থাকে।
গেল মাসের কোন এক দিন আমার ভালবাসার পারদেও খানিকটা ভাটা পড়তে দেখা গেল।
সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে আমি ছেলেকে কোলে নিয়ে টিভি দেখছি।
টিভি’র প্রোগামের নাম ‘ডার্টি জবস’।
না পাঠক, অশ্লীল কিছু না।
যে সব কাজ মানুষ করতে চায় না – সেটা নিয়ে ডিসকভারি চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে নিজের পায়ে গরম কিছু অনুভব করলাম।
ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখি সে ‘পু পু ফেইস’ দিয়ে বসে আছে।
বিদ্রঃ পায়খানা করার সময় আমার ছেলে ঠোট চোখা করে বসে থাকে। আমার গিন্নি আদর করে সেটার নাম দিয়েছে ‘পু পু ফেইস’।
আমার ভ্রু তাই খানিকটা কুঞ্চিত হল।
রাত তিনটায় আমার ছেলের চোখে ঘুম নেই বলে শুরু থেকেই আমি খানিকটা বিরক্ত।
এখন তার সাথে যোগ হয়েছে আমার কোলে বসে পায়খানা করা। সেটাতে অবশ্য আমার আপত্তি নেই। ছেলে বরং পায়খানা ঠিক মত না করলেই আমার বেশী চিন্তা লাগে।
কিন্তু ডাইপারের পাশ দিয়ে পায়খানা লিক করার ব্যাপারটা কিভাবে হাসি মুখে মেনে নেয়া যায়?
আমি তাই ছেলের দিকে খানিকটা হতাশ হয়ে তাকালাম।
আমার চাহুনি দেখে ছেলে কি বুঝল – কে জানে?
হঠাৎ দেখি ঠোট উল্টে তারস্বরে চিৎকার!
ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে আমিই বোধ হয় তাঁর ডাইপারে ঢুকে হেগে-মুতে দিয়েছি।
আমি তাই আর সময়ক্ষেপণ না করে তাঁকে নিয়ে ছুটলাম বেডরুমে।
সেখানে তাঁর ডাইপার বদলানোর জন্য তামাম ব্যাবস্থা করে রাখা হয়েছে।
দুই মিনিট পরের কথা।
ছেলে আমার সামনে শুয়ে আছে।
আমি দুরুদুরু বুকে তাঁর ডাইপার বদলাচ্ছি। ডাইপারের ভেতর থেকে আসছে বিকট গন্ধ।
গন্ধে নাক কুঁচকে আসছে।
এমন সময় পেছন থেকে গিন্নির গলা ভেসে এল – “আমার ছেলেকে রাগ করে ডাইপার পড়াচ্ছ কেন? হাসো। হেঁসে হেঁসে ডাইপার পড়াও।”
গিন্নির কথায় আমার ভ্রু আরো কুঞ্চিত হল।
মহিলা বলে কি! এই গন্ধের মধ্যে হাসতে গেলে গন্ধ নাকে না – পেটে গিয়ে ঠেকবে!
আমি তাই মনে অন্য দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলাম।
ডিস্কভারি চ্যানেলের ‘ডার্টি জব’ অনুষ্ঠানটিতে কি কখনো ডাইপার বদলানো নিয়ে কোন এপিসোড করা হয়েছে?
একজন বাবা তাঁর সন্তানের গু ভর্তি ডাইপার চেঞ্চ করছেন। করতে চাচ্ছেন না – কিন্তু করতে হচ্ছে। এটাই কি সব থেকে বড় ডার্টি জব না?!
এই সব চিন্তা করতে করতে ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখি – ছেলে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাঁকিয়ে আছে।
আমি কি চিন্তা করি সেটাই হয়ত বোঝার চেষ্টা করছে?
আমি ছেলের দিকে আরো মনোযোগ দিয়ে তাকালাম।
চাহুনিতে একটা চোরা চোরা ভাব।
আমার কোলে বসে পায়খানা করে সে কি লজ্জিত?
আহা! – মনটা হঠাৎ মায়ায় ভরে গেল।
এটাই কি ভালবাসা?
search terms: Fahim, fahim aziz, short story, baba-der-bhalobasha