ঢিল মারি তোর টিনের চালে (পর্ব ২)

পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

অয়নদের টিনের চালে ঢিল মারার ঘটনার পর বেশ কিছুদিন আমি শান্ত ছিলাম। 

তবে এই  শান্ত থাকা যতটা না বিবেকের দংশনে, তার থেকেও বেশী এলাকাবাসীকে ত্যাক্ত করার নতুন এক মারফতি উপায় খুঁজে পাওয়ায়। 

ঘটনা নিম্নরুপঃ 

১৯৯৩ সালের মাঝামাঝি শ্রীলংকার প্রসিডেন্ট ‘রানাসিংহে প্রেমাদাসা’ তামিল টাইগারদের বোমা হামলায় নিহত হন। 

যে কোন কারণেই হোক, এই ঘটনা সে সময় আপামর বাঙ্গালির চিত্তকে হেলিয়ে দিয়ে যায়।

জনগণের ভাবাবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাংলাদেশ সরকার তাই সিদ্ধান্ত নেন প্রেমাদাসা’র অন্তিমযাত্রার অনুষ্ঠানটি টিভিতে সরাসরি দেখানো হবে। 

সে আমলে ক্রিকেট ওয়ার্ডকাপ, স্বাধীনতা দিবসের প্যারেড, আর নতুন কুঁড়ি ছাড়া সরাসরি দেখার মত বিশেষ কোন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) দেখানো হতো না। 

বিটিভির এই ঘোষণার পর তাই চারদিকে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল। 

পাড়ার বড় ভাইরা ঘোষণা দিলেন, অনুষ্ঠানের দিন বিকেলে আমরা কেও খেলাধুলা করব না। সবাই যারযার পরিবারের সাথে সময় কাটাবো। 

এই উপলক্ষ্যে জনৈক বড় ভাইয়ের বাড়িতে পোলাউ রান্নার আয়োজন হয়েছে বলেও খবর চাউড় হয়েছিল। 

যাইহোক, আমিও সামাজিকতার বাইরে না গিয়ে সেদিন দুপুরে টিভি সেটের সামনে বসে পড়লাম পরিবার সমেত, এবং অনুষ্ঠান চলাকালে লক্ষ্য করলাম এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই নিরবতা ভর করেছে। বারান্দায় কেও নেই। রাস্তাও খালি!

১৫ মিনিট পরের কথা।  

অনুষ্ঠানটি মনঃপুত না হওয়ায় আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ির পেছনের বারান্দায় গিয়ে খেলাধুলা করবো।

উল্লেখ্য, সে সময় আমাদের গ্রীনরোডের বাড়িটি ছিল বিশাল! 

বাড়ির পেছনের বারান্দা থেকে চিৎকার করলে সামনের দিকে তা ভালো মত শোনা যেত না। 

বারান্দায়  খেলতে গিয়ে আমার মাথায় তাই এক মারফতি বুদ্ধি খেলে গেল।

দুই মূহুর্ত পরের কথা।।

আকাশ বাতাস ফাটিয়ে আমার অহেতুক চিৎকার – “চোর, চোর, চোর!”

আমার চিৎকারে আশেপাশের প্রতিবেশীরা হুরমুর করে রাস্তায় বেড়িয়ে এলেন এবং বেশ কিছুক্ষণ খোজাখুজির পর বুঝতে পারলেন – এটা কোন এক বদের কান্ড। ফল্স এলার্ম।

তবে এর মাঝে ঘটনা যা ঘটার তা ঘটে গেছে। 

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই কাজটি করে আমি তুমুল আনন্দ পেয়ে গেছি।

পরিণতি –  পারিবারিক কাজের মেয়ের কাছে হাতে-নাতে ধরা পড়ার আগ-পর্যন্ত প্রায় তিন-চার মাস পাড়া প্রতিবেশীকে আমার এই অত্যাচার সহ্য করতে হয়।    

যখনই চিত্তবিনোদনের জন্য ভাল কোন অনুষ্ঠান টিভি-তে শুরু হতো, আমি “চোর চোর” বলে চিৎকার করে উঠতাম।

পাঠক, ওই যে বললাম, “অয়নদের টিনের চালে ঢিল মারার ঘটনার পর বেশ কিছুদিন আমি শান্ত ছিলাম”। 

এই “বেশ কিছুদিন” আমি “এই” করে কাটিয়েছি। 

যাইহোক, এরপর কেটে গেছে বেশ কিছু দিন। 

১৯৯৫ সালের মাঝামাঝি পেলাম এক তুমুল সুসংবাদ! 

এ বছরের শেষের দিকে (ডিসেম্বরে) আমার বড় কাজিনরা অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে আসছে! 

খবরটা শুনে আনন্দে আমার ঘুম নষ্ট হয়ে গেল!

সারাদিন ভাবি – বড় ভাই আসার পরে তাঁর সাথে কি খেলা যায়! কি করা যায়! কি দেখানো যায়?

এই নিয়ে আমি ছোট একটা একটিভিটি খাতাও বানালাম। 

যখন যা চিন্তা মাথায় আসে – হুট করে খাতায় লিখে ফেলি। পাছে ভুলে না যাই!

আমার একটিভিটি খাতার প্রথম পয়েন্টে লেখা –

 “১) টিনের চালে ইট মারা।”

(চলবে)  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *