পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন | পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
১৯৯৫ সাল।।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আমার বড় খালা তার পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন।।
আমার ফাইনাল পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। হাতে অফুরন্ত সময়।
বড় কাজিন অন্তুকে ফিরে পাবার জন্য এর থেকে ভালো সময় আর হয় না।
আমিও তাই সময় ক্ষেপণ না করে তারা এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় আসার সাথে সাথেই তাকে নিয়ে রওনা হলাম ছাদে।
অয়নের বাসার চালে ঢিল মারা থেকে আমি ইতিমধ্যে শিক্ষা গ্রহণ করেছি।
আমি তখন ছোট সাইজের ইট পাটকেল প্রতিবেশিদের দিকে ছুড়ে মারি।
উল্লেখ্য, আমরা যে বিল্ডিংয়ে ছিলাম তার পেছনের দিকে সে সময় একটি বস্তি ছিল।
সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। খুব সম্ভবত কারো জমিতে এক তালা টিনের ঘর উঠিয়ে ভাড়া থাকত।
অয়নের পর এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোই হয়ে গেল আমার টার্গেট।
মাঝে মধ্যে মন খারাপ থাকলে আমি ছাদে যাই, এবং তাদের চালে ইটের টুকরা ফেলেই রেলিংয়ের পাশ থেকে দূরে সরে যাই।
মাঝে মধ্যে নিচ থেকে তাদের শোরগোল শুনি।
তারা “কে? কে?” বলে ডাক দেয়।
আমি মুখ চেপে রেলিংয়ের দেয়ালে পিঠ রেখে হাসি।।
আমার দিক থেকে চিন্তা করলে বেশ ভালই যাচ্ছিল দিনগুলো।
তবে সব আনন্দেরই একটা শেষ আছে। আমার আনন্দেরও শেষ হলো সহসাই।
অন্তুকে (বড় কাজিন) ছাদে নিয়ে গিয়ে আমি আমার প্ল্যানের বিশদ ব্যাখ্যা দিলেও তাকে বলতে ভুলে গেলাম যে ইট মেরেই রেলিংয়ের কাছ থেকে দূরে সরে আসতে হবে এবং মাটিতে বসে পড়তে হবে। এর ফলে কুকীর্তিটা কে করেছে নীচ থেকে দেখা যাবে না।
পরিণাম – আমি ইট ছুড়ে মাটিতে বসে পড়লেও, অন্তুকে দেখা গেল ঠায় দাঁড়িয়ে নীচে তাকিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে। আর নীচের থেকে শোরগোল শোনা যাচ্ছে – “ওই যে, ওই ছেলেটা ইট মারছে”।
পনের মিনিট পরের কথা।।
অন্তু আর আমাকে ছাদ থেকে ডেকে আনতে কাজের মেয়ে হাজির। তার ভাষ্য মতে, বস্তিবাসী দা হাতে আমাদের বাড়ি ঘিরে ফেলেছেন। তারা আমাদের দুই ভাইকে শাস্তি দিতে চায়। বাসা থেকে জরুরি ফরমান জারি হয়েছে – “এক্ষন ঘরে আহেন”।
মুরুব্বিরা কিভাবে এই ঘটনা সামাল দিয়েছিলেন তা আমার জানা নেই।
অন্তু আর আমি তখন ছিলাম ঘরবন্দি। তবে এই ঘটনার প্রভাব আমার জীবণে ছিলো সুদূরপ্রসারী।
অন্তুরা চলে যাবার পর বস্তির ছেলেরা আমাকে টার্গেট করে এবং তাদের বাড়িতে ইট ছুড়ার দায়ে আমাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।
ব্যপারটা এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় যে একদিন শুক্রবার সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাদের সাথে আমার হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এখনও মনে আছে রবিন নামের একটি ছেলে আমার মেরুদন্ড বরাবর ঘুষি মারে। পেছন থেকে আঘাত করায় আমি তাকে থামাতে পারিনি। তবে সেই মূহুর্তে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে এবং আমি মারা যাচ্ছি।
এই সব ঘটনার সমাপ্তি ঘটে এলাকার এক বড় ভাইয়ের হস্তক্ষেপে।
বড় ভাইয়ের নাম ছিল মিনার।
মিনারের মতই তিনি ছিলেন লম্বা। খুব সম্ভবত ৬ ফুটের কাছাকাছি। আবার কে জানে হয়ত আমি উচ্চতায় খাটো হওয়ায় তাকে অত লম্বা মনে হয়েছিলো?
যাইহোক, মিনার ভাইয়ের ঘটনা বলে এই ধারাবাহিক সিরিজ শেষ করছি।।
ঘটনার দিন আমি যোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেছি।
মসজিদে যাবার পথেই লক্ষ্য করছিলাম বস্তির বেশ কয়েকজন ছেলে আমাকে ফলো করছে। কারও কারো হাতে গাছের ডাল-পালা, ইট ছিলো।
আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে মসজিদে ঢুকি, এবং নামাজ পড়ে বের হবার পরও দেখি ছেলেগুলি গেটের বাইরে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
সেদিন আল্লাহ-ই হয়ত আমাকে মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ মসজিদ থেকে বের হবার ঠিক আগ মূহুর্তে আমি দেখি মিনার ভাই সালাম ফেরাচ্ছেন।
সেদিন কাঁদোকাঁদো হয়ে ভাইয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম, এবং আল্লাহ’র কুদরতে তিনি তা করেছিলেন।
ভাইয়ের ধমক আর দৌড়ানি খেয়ে বস্তিবাসী আর দ্বিতীয়বার আমার ওপর হামলা করার সাহস করেনি।
লেখার শেষ মুহুর্তে তাই মিনার ভাইকে স্মরণ করছি এবং আশা করি আল্লাহ তাকে ভালো রেখেছেন।
(সমাপ্ত)
Search term: Fahim Aziz, dhil-mari-tor-tin-er-chale-3, part 3