এত সাহস  পাও কোথা থেকে?

দুঃখ পেয়ে কান্না শুরু করলে, আমার ছেলের চোখ বন্ধ হয়ে যায়। 

আপাত দৃষ্টিতে ব্যাপারটি কিউট মনে হলেও, সমস্যা অন্যখানে লুকায়িত। 

 একবার যদি তাঁর চোঁখ বন্ধ হয় – তবে আশেপাশে কি ঘটল, কে কি বলল, বা কে কি করলো –  তাতে আরকিছু আসে-যায় না। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা চোখের সামনে আওড়াতে-আওড়াতে, সে আকাশ বাতাস ফাটিয়ে চিৎকার চেচামেচি করবে!

কান্না থামবে গলা শুকিয়ে খুকখুক করে কাশি দিয়ে।

 কান্নাকাটির এই নাটক প্রায়শই মঞ্চায়িত হয় খাওয়া-দাওয়াকে কেন্দ্র করে। 

আমার ছেলে বয়সে ছোট হওয়ায় এখনও বেবী ফর্মূলা খায় চুকচুক করে। 

বেবী ফর্মূলার সমস্যা হল,  বানাবার পর এ জিনিষ ১ থেকে ২ ঘন্টার বেশী রাখা যায় না রুম টেম্পারেচারে। 

ফেলে দিতে হয়। 

তবে ফর্মূলা না খেয়ে ফেলে দিলেও ফিডার আবার নতুন করে ধুয়ে রাখতে হয় সাবান পানি দিয়ে।

এই প্রকৃয়ার মূল সমস্যা হলো – গিন্নি হয়ত ফর্মূলা বানিয়ে হাতে ধরে বসে আছে ২ ঘন্টা ধরে। 

বেশ কিছুক্ষণ ধরে জোর-জবরদস্তি করেও ছেলেকে খাওয়াতে পারেনি এক ফোঁটা। 

অথচ যেই দু’ঘন্টা পার হলো – হাত-পা ছুঁড়ে, চোখ বন্ধ করে, গ্যাদার চিৎকার! – তাঁর খিদা লেগেছে! 

কথায় আছে – পেটে খেলে পিঠে সয়। 

আমার ছেলের পেট খালি হয়ে গেছে। পরিণাম –  পিঠে হাত বুলিয়ে এখন আর লাভ নেই। সে চোঁখ খুলবে না! 

সারা পাড়াকে তাঁর জানাতে হবে – বাবা-মা তাঁকে খাওয়া দেয়নি।।

যাইহোক, কান্নাকাটির এই নাটকে  সমস্যা হলো,  আমার গিন্নির এক হাতে তখন গ্যাদা,  আর এক হাতে এঁটো দুধের বোতল। 

নতুন করে ফর্মূলা বানাতে হলে প্রথমে হাতের এঁটো বোতল ধুতে হবে। 

এরপর ফ্রিজ থেকে ফর্মূলা বের করে নতুন বোতলে ভরে তা গরম পানিতে চুবিয়ে রেখে খাবার উপযোগী করতে হবে। 

এরপর ছেলেকে শান্ত করে, খাইয়ে – তবেই মুক্তি!

এই যখন পরিস্থিতি, আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার গিন্নি গ্যাদাকে কোলে নিয়ে মোবাইল টিপছে। 

গ্যাদা তাঁর কোলে পরম শান্তিতে ঘুমুচ্ছে। চোখ বন্ধ। 

সাইড টেবিলের তিনটি এঁটো দুধের বোতল দেখে গিন্নিকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম – “ছেলে খাবে কখন?”।

গিন্নি মোবাইল টেপার ফাঁকে বিরক্ত হয়ে বলল – “একটু পরেই খাবে মনে হয়। ২ ঘন্টা আগে লাস্ট খেয়েছে। “

আমি এঁটো বোতলগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে উদাস হয়ে জিজ্ঞেস করলাম –  “এত সাহস  পাও কোথা থেকে?”

গিন্নি খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে খিলখিল করে হাসতে শুরু করে। 

আমি বোতলগুলো রান্নাঘরে নিয়ে ধুতে শুরু করলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *